বাংলাদেশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরপরই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। বদ্ধ পরিবেশে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সিনেমা হলগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু জানিয়েছেন, মহামারির কারণে ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব সিনেমা হল এবং সিনেপ্লেক্স বন্ধ রয়েছে।
খসরু ইউএনবিকে বলেন, ‘যেহেতু ভাইরাসটি কাছাকাছি থাকা মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয় তাই সিনেমা হলগুলোর মতো জনাকীর্ণ ভবনের অভ্যন্তরে মানুষের মধ্যে ভাইরাসটি সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকির রয়েছে। তাই আমরা সিনেপ্লেক্সসহ হলগুলোতে কোনো শো না চালানোর সিদ্ধান্ত নেই। গত ১৮ মার্চ থেকে পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি না দেয়া পর্যন্ত এগুলো বন্ধ রয়েছে।’
নিষেধাজ্ঞার আগে প্রদর্শিত সিনেমা সম্পর্কে বলতে গেলে শাকিব খানের ‘শাহেনশাহ’ একমাত্র উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র, যা ৬ মার্চ মুক্তি পেয়েছিল এবং বন্ধ হওয়ার আগে প্রায় শতাধিক হলে চলেছে।
এদিকে, প্রখ্যাত পরিচালক মাসুদ হাসান উজ্জ্বল পরিচালিত ‘ঊনপঞ্চাস বাতাশ’ ১৩ মার্চ এবং ২৭ মার্চ চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত ‘বিশ্বসুন্দরী’ মুক্তির কথা থাকলেও এগুলোসহ বেশ কয়েকটি বহুল প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্রের মুক্তি আটকে আছে।
করোনা সংকট শুরু হওয়ার আগে চলচ্চিত্র প্রেমী ও হল মালিকরা শাকিব খানের সিনেমা ‘বিদ্রোহী’ এবং ‘নবাব এলএলবি’, অরিফিন শুভ অভিনীত অ্যাকশন ধামাকা ‘মিশন এক্সট্রিম’, সিয়াম আহমেদ অভিনীত অ্যাকশন চলচ্চিত্র ‘শান’, অনন্ত জলিলের বাংলাদেশ-ইরানের যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র ‘দিন-দ্য ডে’, টলিউড তারকা দেব অভিনীত বাংলাদেশি গুপ্তচর থ্রিলার ফিল্ম ‘কমান্ডো’ এবং আরও অনেক চলচ্চিত্র ঈদুল-ফিতরে মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন। তারা আশা করেছিল যে এরই মধ্যে হওয়া লোকসান এ ছবিগুলোর মধ্যে দিয়ে পূরণ করে নেবেন।
এখন ঈদে প্রত্যাশিত চলচ্চিত্র মুক্তি দেয়া নির্মাতাদের পক্ষে কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
আরিফিন শুভ এবং মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ বিজয়ী জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী অভিনীত ‘মিশন এক্সট্রিম’ এর পরিচালক ফয়সাল আহমেদ ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা কার্যক্রম স্থগিত রেখেছি এবং পবিত্র ঈদুল-ফিতরে মুক্তি দিতে যাওয়া আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য সময় পুনর্নির্ধারণের চিন্তাভাবনা করছি।’
এ পরিস্থিতিতে তার মতামত ব্যাখ্যা করে ফয়সাল বলেন, ‘আমরা এখনও কোনো কিছু ঠিক করিনি, এ মুহূর্তে সবাই করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকার বিষয়ে চিন্তা করছে। খুব কম সময়ের মধ্যে মহামারি শেষ হয়ে গেলেও মানুষ খুব তাড়াতাড়ি সিনেমা হলগুলোতে ছবি দেখতে যাবে না। এটা শুধু আমাদের দেশেই নয়, পুরো বিশ্বজুড়েই একই অবস্থা বিরাজ করছে।’
এর সমাধান বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি এ মহামারির কারণে শিল্পী, বিনোদন জগতের সাথে সম্পৃক্তরা এবং প্রযোজনা কর্মীরা যারা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন তাদের ও চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে সরকারি পদক্ষেপের ওপর জোর দিয়েছেন।
চলমান সংকট সমাধানের জন্য সম্প্রতি অভিনেতা ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর জানিয়েছেন, সমিতির পরিচালনা পর্ষদ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংগঠন মিলে উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধান করার জন্য ‘সম্মিলিত’ পরিকল্পনা করছে এবং এ জন্য তারা তাদের মূল্যায়ন শুরু করেছেন ও কিছু মানদণ্ড মেনে তহবিলের জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে।
যদিও সরকারের কাছ থেকে তহবিলের জন্য অনুরোধ করা হবে, তবে মহামারির সময়ে এ জাতীয় তহবিলের জন্য অগ্রাধিকার পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি নাও হতে পারে। বিষয়গুলো এখন এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে সবদিক থেকে চেষ্টা সত্ত্বেও, সরকারের সাথে চলচ্চিত্র শিল্প সংশ্লিষ্টরা এখনও একটি বৈঠকও করে উঠতে পারেনি। এ অবস্থায় অনুদানের কথা ভাবনা অনেক দূরের বিষয়ই বটে।